ইসরায়েলর বর্বর আগ্রাসনের প্রতিবাদে আয়োজিত ‘মার্চ ফর গাজা’ কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়েছে লাখো মানুষের অংশগ্রহণে। ফিলিস্তিনির পাশে থাকার দৃঢ় অঙ্গীকারের মধ্যদিয়ে শেষ হয়েছে। গতকাল শনিবার রাজধানীর ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে এই গণজমায়েত অনুষ্ঠিত হয়। বিকেল সোয়া তিনটায় পবিত্র কোরআন তেলাওয়াতের মধ্য দিয়ে এর আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। এদিন বিকেল সোয়া ৪টায় মুফতি আব্দুল মালেকের পরিচালনায় মোনাজাতের মাধ্যমে এই গণজমায়েত শেষ হয়। লাখো মানুষের হৃদয়ে জেগে ওঠে ফিলিস্তিনিদের প্রতি ভালোবাসা, সহমর্মিতা ও একাত্মতার অনন্য বার্তা। তবে সমাবেশে অতিথিদের মঞ্চে আহ্বান জানানো হলেও তারা কোনো বক্তব্য দেননি। ‘মার্চ ফর গাজা’র ঘোষণাপত্র পাঠ করেন দৈনিক আমার দেশের সম্পাদক মাহমুদুর রহমান। ঘোষণাপত্রে মুসলিম বিশ্বের নেতাদের প্রতি আহ্বান জানানো হয়, তারা যেন ইসরায়েলর সঙ্গে সব ধরনের সম্পর্ক ছিন্ন করেন এবং অবিলম্বে গাজায় ইসরায়েলর আগ্রাসন বন্ধের জন্য পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। সেই সঙ্গে ইসরায়েল পণ্য বর্জনের আহ্বানও জানানো হয়।
কর্মসূচিতে উপস্থিত ছিলেন বিশিষ্ট ইসলামিক স্কলার ড. মিজানুর রহমান আজহারী, জনপ্রিয় ইসলামি আলোচক শায়খ আহমাদুল্লাহ, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ, জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার, জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) দক্ষিণাঞ্চলের মূখ্য সংগঠক হাসনাত আব্দুল্লাহসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক সংগঠনের নেতারা। বিএনপির পক্ষ থেকে আরও অংশ নিয়েছিলেন যুগ্ম মহাসচিব শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী, আব্দুস সালাম আজাদ। আরো উপস্থিত ছিলেন-জামায়াতের ঢাকা মহানগর উত্তরের সেক্রেটারি জেনারেল রেজাউল করিম ও দক্ষিণের সেক্রেটারি জেনারেল শফিকুল ইসলাম মাসুদ, বাংলাদেশ লেবার পার্টির একাংশের চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, গণঅধিকার পরিষদের একাংশের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান। সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের খতিব মুহাম্মাদ আবদুল মালেক।
এরআগে সকাল থেকেই ঢাকার বিভিন্ন এলাকা ও আশপাশের জেলা থেকে লোকজন আসতে শুরু করেন সোহরাওয়ার্দী উদ্যান প্রাঙ্গণে। কাওরান বাজার মোড়, বাংলামোটর ও কাকরাইল মোড় এলাকা থেকে দলে দলে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের দিকে যাচ্ছে মানুষ। দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে ঢাকার বিভিন্ন প্রান্ত ও বাইরের জেলা থেকে বাস, মিনি ট্রাক, মোটরসাইকেলসহ নানা যানবাহনে করে মানুষ এসে জড়ো হন। পরে তারা পায়ে হেঁটে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের দিকে রওনা দেন। সমাবেশে অংশ নেয়া অনেকের হাতে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা এবং ফিলিস্তিনি পতাকা দেখা গেছে। কেউ কেউ কালেমা খচিত ফিতা মাথায় বেঁধেছিলেন। অংশগ্রহণকারীরা ইসরায়েলবিরোধী বিভিন্ন স্লোগান দিতে দিতে এগিয়ে যান। পাশাপাশি জাতিসংঘের কাছেও জবাবদিহি দাবি জানান।
ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর নির্মম হত্যাযজ্ঞের প্রতিবাদে ‘মার্চ ফর গাজা’ কর্মসূচিতে সকাল থেকেই মানুষের স্রোত নামে ঢাকায়। বিকেল সোয়া চারটার দিকে মোনাজাতের মধ্য দিয়ে কর্মসূচি শেষ হলেও তখনও সোহরাওয়ার্দীমুখী স্রোত ছিল প্রতিবাদী মানুষের। এমনকি কর্মসূচি শেষ হওয়ার অনেক পরেও রাজধানীর মহাখালী, বিজয় সরণি ও ফার্মগেট এলাকায় দেখা গেছে সোহরাওয়ার্দী অভিমুখে মানুষের স্রোত। গতকাল শনিবার বিকেল পৌনে পাঁচটার দিকে রাজধানীর কারওয়ান বাজার এলাকায় দেখা যায় এক লেন দিয়ে মানুষ সমাবেশস্থল ছাড়ছে, আরেক লেন দিয়ে মানুষ তখনও শাহবাগের দিকে যাচ্ছে। সবাই পায়ে হেঁটে স্লোগানে স্লোগানে এগিয়ে যাচ্ছে। এই মিছিলের যেন শুরু-শেষ নেই। এর আগে বাদ ফজর থেকেই রাজধানী ও আশপাশের বিভিন্ন জেলাসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসতে শুরু করেন নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ। মিছিলে অংশ নেয়া অধিকাংশের হাতে ফিলিস্তিনের পতাকা ও বিভিন্ন স্লোগানসম্বলিত প্ল্যাকার্ড দেখা গেছে। এদিন সকালে সোহরাওয়াদী উদ্যানের আশেপাশের এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, উদ্যানের রমনা কালিমন্দির গেট, টিএসসি সংলগ্ন গেট, রমনা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউট সংলগ্ন গেট, ভিআইপি গেট দিয়ে কিছুক্ষণ পরপরই মিছিলসহ সমাবেশস্থলে আসছেন অংশগ্রহণকারীরা। এ সময় ‘ফিলিস্তিন মুক্ত করো’, ‘গাজা রক্তে রঞ্জিত, বিশ্ব কেন নীরব’, ‘তুমি কে আমি কে, ফিলিস্তিন ফিলিস্তিন’ স্লোগান দিতে থাকেন কর্মসূচিতে আসা লোকজন। কর্মসূচিতে জামায়াতে ইসলামী, বিএনপি, এনসিপিসহ প্রায় সব রাজনৈতিক দল, আলেম-ওলামা সমাজসহ সব অঙ্গনের মানুষ সংহতি জানিয়েছেন। ফলে সকাল থেকে জনতার স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণে লোকারণ্য হয়ে ওঠে উদ্যান। এদিন বেলা ১১টার দিকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, রমনা পার্ক, মৎসভবন, হাইকোর্টের সামনের এলাকা, ঢাবির কার্জন হল, কেন্দ্রীয় লাইব্রেরি এলাকা, শাহবাগ, কাঁটাবন, বাংলামোটর লোকে লোকরণ্য হতে দেখা যায়। এসব এলাকা দিয়ে কোনো যান চলাচল করতে দেখা যায়নি। বন্ধ ছিল রিকশাও।
রক্তাক্ত মৃত শিশুরা পরে আছে, কারো গায়ের বিভিন্ন জায়গায় ক্ষত ও রক্তের চিহ্ন, কেউ কান্না করছে আবার কেউ পরিবার-স্বজনদের খুঁজছে। এটি ফিলিস্তিনের বিভিন্ন শহরের মতো হলেও ঢাকার শাহবাগে এমন দৃশ্য দেখা গেছে। গাজা ও রাফার বর্তমান অবস্থা তুলে ধরতে এমন স্যাটায়ারধর্মী প্রতিবাদের আয়োজন করেছে সায়মুম শিল্পীগোষ্ঠী। এদিন দুপুর ২টায় এই ব্যতিক্রমধর্মী প্রতিবাদী কর্মসূচি পালন করেছে সায়মুম শিল্পীগোষ্ঠীর কর্মী ও স্বেচ্ছাসেবীরা। মার্চ ফর গাজা কর্মসূচির সমর্থনে এ আয়োজন করা হয়েছে বলে জানা যায়। এছাড়া কর্মসূচিতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ও ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর রক্তাক্ত সংলাপেরও একটি দৃশ্য অভিনয় করে দেখানো হয়েছে। এসময় ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, যতদিন পুরো ফিলিস্তিন ইসরায়েলের দখলে না আসে ততদিন আমরা তাদের সাহায্য করে যাব। সকল ধরনের সহযোগিতার মাধ্যমে ফিলিস্তিন ভূখণ্ড ইসরায়েলের দখলে দেখতে চাই। নেতানিয়াহু বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের মতো বন্ধু রাষ্ট্রের সহযোগিতা পেয়ে আমরা ধন্য। এ সহযোগিতার জন্য আমরা আজীবন কৃতজ্ঞ থাকব। অন্যদিকে মুসলিম বিশ্বের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলে একজন শিল্পী অ্যারাবিয়ান শেখ সেজেছেন। তিনি সব কিছু দেখছেন আর হাসছেন। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা দেখছি আসলে কেনো যুদ্ধ হচ্ছে। এছাড়া আমাদের দেশের ভূখণ্ড অক্ষত রাখার জন্য কাজ করছি এবং নিজেদের নাগরিকদের ভোগ-বিলাসী জীবনযাপনের সকল ব্যবস্থা করছি। ব্যতিক্রমী এই প্রতিবাদী কর্মসূচি থেকে মুসলিম বিশ্বের ভূমিকার ওপর ধিক্কার জানানো হয়। এছাড়া অবিলম্বে গাজার ব্যাপারে বিশ্বের সকল মুসলিমদের ঐক্যের আহ্বান করা হয়। কর্মসূচিতে শিশুসহ ৫০ জনের বেশি শিল্পী অংশগ্রহণ করেছে।
ফিলিস্তিনের স্বাধীনতা ও শান্তি কামনায় ‘মার্চ ফর গাজা’ কর্মসূচিতে বিশেষ মোনাজাত করা হয়েছে। মোনাজাতে অংশ নেয়া লাখো মানুষের চোখে ছিল অশ্রু। ইসরায়েলি বাহিনীর অব্যাহত হামলা, শিশু ও নারীদের মৃত্যু, ধ্বংসস্তূপে পরিণত হওয়া গাজা উপত্যকার করুণ বাস্তবতা হৃদয়ে নিয়ে মানুষ প্রার্থনা করেন শান্তির জন্য। গতকাল শনিবার বিকেল সোয়া ৪টার দিকে এই বিশেষ মোনাজাত করা হয়। মোনাজাতে বলা হয়, ইসরায়েল ফিলিস্তিনে যে নৃশংসতা চালাচ্ছে, তা মানবতার ওপর চরম আঘাত। আমরা আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করছি, যেন তিনি নির্যাতিত মুসলমানদের রক্ষা করেন এবং ফিলিস্তিনকে স্বাধীনতার আলো দেখান। একইসঙ্গে মোনাজাতে গাজায় চলমান ইসরায়েলি হামলা বন্ধ হওয়া, ধ্বংসস্তূপে আটকে পড়াদের উদ্ধার ও আহতদের সুস্থতা, শিশু ও নিরীহ নাগরিকদের জীবন রক্ষায় কার্যকর পদক্ষেপ, বিশ্ব নেতাদের বিবেক জাগ্রত হওয়া, নিরস্ত্র ফিলিস্তিনিদের ওপর অব্যাহত আগ্রাসনের বিচার চেয়ে দোয়া করা হয়েছে। মোনাজাতে অংশ নেয়া মো. শাহজাহান নামে এক বয়োজ্যেষ্ঠ শিক্ষক বলেন, টেলিভিশনে ছোট ছোট শিশুদের লাশ দেখে ঘুম আসে না। আজ মোনাজাতে শুধু একটাই কথা বলেছি যে, হে আল্লাহ, ফিলিস্তিনকে রক্ষা করো।
লাখ লাখ মানুষের অংশগ্রহণে পালিত হলো ‘মার্চ ফর গাজা’ কর্মসূচি। ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর অব্যাহত বর্বর গণহত্যার বিরুদ্ধে প্রতিবাদে আয়োজিত এই কর্মসূচিতে ঘোষণাপত্র ও অঙ্গীকারনামা পাঠ করা হয়েছে। গতকাল শনিবার বিকেলে রাজধানীর ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে গণজমায়েতে ঘোষণাপত্র ও অঙ্গীকারনামা পাঠ করেন দৈনিক আমার দেশের সম্পাদক মাহমুদুর রহমান।
প্যালেস্টাইন সলিডারিটি মুভমেন্ট বাংলাদেশ আয়োজিত এই কর্মসূচিতে সভাপতিত্ব করেন জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের খতিব মুফতি মুহাম্মদ আবদুল মালেক। তার মোনাজাতের মাধ্যমে অল্প সময়ে সম্পন্ন হয় গণজমায়েত। অনুষ্ঠানে বিপুলসংখ্যক অতিথি উপস্থিত থাকলেও কেউই বক্তব্যের সুযোগ পাননি। লিখিত ঘোষণাপত্র ও অঙ্গীকারনামা সবার বক্তব্য বলে আয়োজকদের পক্ষ থেকে জানানো হয়। মাহমুদুর রহমানের পাঠ করা ঘোষণাপত্র ও অঙ্গীকারনামাটি নিচে হুবহু তুলে ধরা হলো-বিসমিল্লাহির রাহমানীর রাহীম। আল্লাহর নামে শুরু করছি, যিনি পরাক্রমশালী, যিনি ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠাকারী, যিনি মজলুমের পাশে থাকেন, আর জালেমের পরিণতি নির্ধারণ করেন। আজ আমরা, বাংলাদেশের জনতা-যারা জুলুমের ইতিহাস জানি, প্রতিবাদের চেতনা ধারণ করি-সমবেত হয়েছি গাজার মৃত্যুভয়হীন জনগণের পাশে দাঁড়াতে। আজকের এই সমাবেশ কেবল প্রতিবাদ নয়, এটি ইতিহাসের সামনে দেয়া আমাদের জবাব, একটি অঙ্গীকার, একটি শপথ। এই পদযাত্রা ও গণজমায়েত থেকে আজ আমরা চারটি স্তরে আমাদের দাবিসমূহ উপস্থাপন করব-আমাদের প্রথম দাবিগুলো জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি। যেহেতু-জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় সকল জাতির অধিকার রক্ষার, দখলদারিত্ব ও গণহত্যা রোধের সংকল্প প্রকাশ করে; এবং-আমরা দেখেছি, গাজায় প্রতিদিন যে রক্তপাত, যে ধ্বংস চলছে, তা কোনো একক সরকারের ব্যর্থতা নয়-বরং এটি একটি আন্তর্জাতিক ব্যর্থতার ফল; এবং-এই ব্যর্থতা শুধু নীরবতার মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়-বরং পশ্চিমা শক্তিবলয়ের অনেক রাষ্ট্র সরাসরি দখলদার ইজরায়েলকে অস্ত্র, অর্থ ও কূটনৈতিক সহায়তা দিয়ে এই গণহত্যাকে দীর্ঘস্থায়ী করেছে; এবং-এই বিশ্বব্যবস্থা দখলদার ইজরায়েলকে প্রশ্নবিদ্ধ না করে বরং রক্ষা করার প্রতিযোগিতায় নেমেছে; সেহেতু আমরা জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি জোরালো দাবি জানাচ্ছি এবং-গাজা আমাদের জন্য এক আয়না-যেখানে আমরা দেখতে পাই, কীভাবে বিশ্বাসী হওয়া মানে কেবল বেঁচে থাকা নয়, সংগ্রামে দৃঢ় থাকা; সেহেতু আমরা এই মাটির মানুষ, এই মুসলিম ভূখণ্ডের নাগরিক, এই কওমের সন্তান এবং সর্বোপরি মুসলিম উম্মাহর সদস্য-একটি অঙ্গীকার করছি: ১। আমরা সকলে স্বতঃস্ফূর্তভাবে বয়কট করবো-প্রত্যেক সেই পণ্য, কোম্পানি ও শক্তিকে যারা ইজরায়েলের দখলদারিত্বকে টিকিয়ে রাখে; ২। আমরা আমাদের সমাজ এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে প্রস্তুত করবো-যারা ইসলাম ও মুসলিম উম্মাহর সকল প্রতীক ও নিদর্শনকে সংরক্ষণ ও পুনরুদ্ধার করবে, ইনশাআল্লাহ; ৩। আমরা আমাদের সন্তানদের এমনভাবে গড়ে তুলবো-যারা নিজেদের আদর্শ ও ভূখণ্ড রক্ষায় জান ও মালের সর্বোচ্চ ত্যাগে প্রস্তুত থাকবে; ৪। আমরা বিভাজিত হবো না-কারণ আমরা জানি, বিভক্ত জনগণকে দখল করতে দেরি হয় না। আমরা ঐক্যবদ্ধ থাকবো, যাতে এই বাংলাদেশ কখনো কোনো হিন্দুত্ববাদী প্রকল্পের পরবর্তী গাজায় পরিণত না হয়। আমরা শুরু করবো নিজেদের ঘর থেকে-ভাষা, ইতিহাস, শিক্ষা, সংস্কৃতি, অর্থনীতি, সমাজ-সবখানে এই অঙ্গীকারের ছাপ রেখে। আমরা মনে রাখবো: গাজার শহীদরা কেবল আমাদের দোয়া চান না-তারা আমাদের প্রস্তুতি চান। শেষকথা: শান্তি বর্ষিত হোক গাজার সম্মানিত অধিবাসীদের উপর-তাদের উপর, যারা নজিরবিহীন সবর করেছেন, যারা অবিচল ঈমানের প্রমাণ দিয়েছেন। যারা ধ্বংসস্তূপের মাঝেও প্রতিরোধের আগুন জ্বেলেছেন। বিশ্বের নীরবতা ও উদাসীনতার যন্ত্রণা হাসিমুখে বুকের মাঝে ধারণ করেছেন। শান্তি বর্ষিত হোক তাদের উপর, যারা নাম রেখে গেছেন ইজ্জতের খতিয়ানে-শান্তি বর্ষিত হোক হিন্দ রজব, রীম এবং ফাদি আবু সালেহসহ সকল শহীদেরর উপর, যাঁদের রক্ত দ্বারা গাজার পবিত্রভূমি আরো পবিত্র হয়েছে, যাঁদের চোখে ছিল প্রতিরোধের অগ্নিশিখা। শান্তি বর্ষিত হোক বাইতুল মাকদিসের গর্বিত অধিবাসীদের উপর, যাঁদের হৃদয়ে এখনো ধ্বনিত হয় ‘আল-কুদস লানা’, আল কুদস আমাদের!
গাজাবাসীর প্রতি সংহতি জানিয়ে ঢাকায় আয়োজিত ‘মার্চ ফর গাজা’ কর্মসূচিতে অংশ নেয়া প্রায় সহস্রাধিক মানুষকে বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা দিয়েছেন রাজধানীর বিভিন্ন স্বাস্থ্য সেবা প্রতিষ্ঠানে কর্মরত বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক, নার্সসহ অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মীরা। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন স্থানে স্থাপন করা হয় ১০টি মেডিকেল বুথে যেখানে দিনব্যাপী চিকিৎসাসেবা দিয়েছেন তারা। এদিন সন্ধ্যায় চিকিৎসকদের সংগঠন ন্যাশনাল ডক্টরস ফোরামের (এনডিএফ) পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, মার্চ ফর গাজা কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে এক হাজারের বেশি সাধারণ মানুষকে চিকিৎসক সংক্রান্ত নানা সেবা দেয়া হয়েছে। চিকিৎসা পাওয়াদের মধ্যে ২০০ জনের বেশি ছিলেন হিটস্ট্রোক আক্রান্ত ব্যক্তি, ২০ জন ছিলেন হাইপোগ্লাইসেমিয়ায় আক্রান্ত রোগী এবং প্রায় একশ’ জনের বেশি ছিলেন সমাবেশে এসে নানাভাবে আহত মানুষ। এছাড়া ৫০ জনের বেশি রোগীকে অবস্থা গুরুতর হওয়ায় আশপাশের হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। এছাড়াও অসংখ্য মানুষের মধ্যে বিনামূল্যে পানি ও খাবার স্যালাইন বিতরণ করা হয়েছে। সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, মার্চ ফর গাজা শীর্ষক গণজমায়েতকে কেন্দ্র করে স্থাপিত এসব মেডিকেল বুথগুলোতে দিনব্যাপী ছিলো রক্তচাপ ও গ্লুকোজ পরীক্ষা করার সুযোগ। এছাড়াও বিশুদ্ধ পানি, খাবার স্যালাইন এবং প্রয়োজনীয় নানা ধরনের ওষুধ সরবরাহ করা হয়েছে।
জানা গেছে, মেডিকেল বুথে এই সেবাদান কার্যক্রমের নেতৃত্বে ছিল ন্যাশনাল ডক্টরস ফোরাম। এছাড়াও সার্বিক সহযোগিতায় ছিল বাংলাদেশ মেডিকেল কমিউনিটি, ডক্টরস ওয়েলফেয়ার ট্রাস্ট, রিদম বাংলাদেশ এবং মেডিকেল দাওয়াহ সোসাইটি নামক চিকিৎসকদের বিভিন্ন সংগঠন। সেবা নিশ্চিত করতে এসব সংগঠন মিলে ২০টির মতো অ্যাম্বুলেন্স সরবরাহ করেছিলো। সেবামূলক এই উদ্যোগ প্রসঙ্গে ন্যাশনাল ডক্টরস ফোরামের এক মুখপাত্র বলেন, যারা গাজাবাসীর পাশে দাঁড়াতে রাস্তায় নেমেছেন, তাদের যেন স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত না হতে হয়, সেই চিন্তা থেকেই আমরা এই উদ্যোগ নিই। এটি ছিল চিকিৎসকদের একটি মানবিক দায়িত্ব পালন, যেখানে রাজনীতি নয়-মানুষের পাশে দাঁড়ানোই ছিলো মুখ্য উদ্দেশ্য। তিনি বলেন, মার্চ ফর গাজা কর্মসূচিতে সারাদিনব্যাপী চিকিৎসক, নার্স ও স্বেচ্ছাসেবকরা নিবেদিতভাবে কাজ করেন। অনেকেই গরমে অসুস্থ হয়ে পড়লে চিকিৎসকরা দ্রুত সেবা দেন। অ্যাম্বুলেন্সগুলো ছিল প্রস্তুত, যাতে জরুরি রোগীদের দ্রুত হাসপাতালে পাঠানো যায়। এই আয়োজন প্রমাণ করেছে-সংকটময় সময়ে চিকিৎসা সেবার হাত বাড়িয়ে দেয়া শুধু পেশাগত দায়িত্ব নয়, বরং একটি মানবিক দায়বদ্ধতা।
নিউজটি আপডেট করেছেন : Dainik Janata

মার্চ ফর গাজা * সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জনসমুদ্র * ফিলিস্তিনের স্বাধীনতা কামনায় মোনাজাতে কাঁদলেন লাখো মানুষ * মার্চ ফর গাজা’র ঘোষণাপত্র ও অঙ্গীকারনামা * ইসরায়েল পণ্য বর্জনের আহ্বান
গাজায় গণহত্যা বন্ধের দাবি
- আপলোড সময় : ১২-০৪-২০২৫ ১০:০০:৪৪ অপরাহ্ন
- আপডেট সময় : ১২-০৪-২০২৫ ১০:০০:৪৪ অপরাহ্ন


কমেন্ট বক্স
সর্বশেষ সংবাদ